আনোয়ার আলদীন ১৯৭৪ সালের ৬ জানুয়ারি খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনির নগর শ্রীরামপুর গ্রামে সম্ভ্রান্ত ও বিখ্যাত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) চেয়ারম্যান ও দেশের প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী পত্রিকা দৈনিক ইত্তেফাকের যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি আনোয়ার আলদীন সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডে অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তার পিতার নাম আফাজ উদ্দিন (মৃত) এবং মায়ের নাম আমিনা। তার এক স্ত্রী ও দুই কন্যা সন্তান রয়েছে।
প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা
আনোয়ার আলদীন এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হওয়ার পরে সাংবাদিকতার প্রতি প্রবল আগ্রহ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে ভর্তি হন।বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালেই তিনি বাংলাদেশের প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী সংবাদপত্র দৈনিক ইত্তেফাকে বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার হিসেবে যুক্ত হন।সেই সময়ে তার বহু প্রতিবেদন সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি করে। সাংবাদিকতায় অনন্য অবদানের জন্য ১৯৯৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার ৭৫ বছর বা প্লাটিনাম জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে টিএসসিতে আয়োজিত বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে আনোয়ার আলদীনকে বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্রদের মধ্যে সেরা কীর্তিমান সাংবাদিক হিসাবে অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।
কর্মজীবন ও সাংবাদিকতা
আনোয়ার আলদীন নব্বইয়ের দশকের সূচনাভাগে তার পেশাগত জীবন শুরু করেন দৈনিক ইত্তেফাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার হিসেবে। পরবর্তীতে তিনি স্টাফ রিপোর্টার,সিনিয়র রিপোর্টার এবং সর্বশেষ যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে অসামান্য দক্ষতা,কর্মনিষ্ঠা ও যোগ্যতার সঙ্গে সুচারুভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। অনুসন্ধানী প্রতিবেদন,ফিচার,স্পট রিপোর্টিং এবং যে কোন বিষয়ে প্রতিবেদন রচনায় তার মুন্সিয়ানা-দক্ষতা অনন্য।বিশেষ করে ফিচার প্রতিবেদনে তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বী সাংবাদিক হিসাবে নিজেকে বড় উচ্চতায় স্থাপন করেছেন।তার প্রতিবেদনে আঙ্গিকগত বৈচিত্র্য,সহজ সরল অথচ কাব্যিক ভাষা পাঠকদের আলাদাভাবে আকৃষ্ট করে। রাজনৈতিক,পরিবেশ-প্রতিবেশ,জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত,দিবস ভিত্তিক নানা প্রতিবেদনসহ সাংবাদিকতার সকল শাখা-প্রশাখায় তার নিপুণ দক্ষতা অভাবনীয়।
নাগরিক সাংবাদিকতায় তার অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ১৯৯৬ সালে “ভেজালের ভিড়ে আসল উধাও” শিরোনামে ১৭ পর্বের একটি ধারাবাহিক অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদন করেন তিনি,যা দেশজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি করে। সাড়া জাগানো চাঞ্চল্যকর এই প্রতিবেদনের জন্য তিনি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, ইউনেস্কো, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) পুরস্কারসহ বহু সম্মাননা অর্জন করেন।
আনোয়ার আলদীন ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সদস্য হিসাবে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন।
বাংলাদেশ টেলিভিশন প্রিভিও কমিটির সদস্য ছিলেন।
সমাজসেবা ও জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ড
সাংবাদিকতার পাশাপাশি আনোয়ার আলদীন সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডে নিজেকে নিবেদিত করেছেন। তিনি দক্ষিণ খুলনার পাইকগাছা-কপিলমুনি-নগর শ্রীরামপুরে রাস্তাঘাট,জামে মসজিদ, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, মাদ্রাসা, এতিমখানা ও হেফজখানা প্রতিষ্ঠা করেছেন, যা স্থানীয় জনগণের সংকট মোচন ও মৌলিক চাহিদা পূরণে সহায়তা করছে। সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের উন্নয়নে তিনি নিবেদিতপ্রাণ।
২০১৯ সালে কপিলমুনির মুন্সিবাড়িতে সুরম্য ও নান্দনিক সৌন্দর্য মণ্ডিত বায়তুল মা’মুর জামে মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন।
২০২৩ সালে তারেক রহমান হেলথ সেন্টার স্থাপন করেন।
২০২৪ সালে মাদ্রাসা,এতিমখানা ও হেফজখানা কমপ্লেক্স-ইকরা একাডেমী নির্মাণ করছেন।
নগর শ্রীরামপুরে এলাকার হাজার হাজার মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে ১২ ফুটের রাস্তা তৈরি করেছেন।
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার ও সম্মাননা
আনোয়ার আলদীন অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো –
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড (২০০০)
ইউনেস্কো ক্লাব অ্যাওয়ার্ড (২০০৬)
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) অ্যাওয়ার্ড (১৯৯৯)
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার প্লাটিনাম জয়ন্তী অ্যাওয়ার্ড (১৯৯৬)।
লালন শাহ পদক বঙ্গাব্দ ১৪১১
চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)
১০ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার তাকে সরকারি বার্তা সংস্থা বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-এর পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ প্রদান করেছেন। এই নিয়োগে দেশের অসংখ্য মানুষ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে এবং তার দীর্ঘজীবন ও সমৃদ্ধির জন্য শুভকামনা জানিয়েছে।